Day1

থানচি থেকে সব চেকিং এড়িয়ে গন্তব্য শেরকর পাড়া,৬ ঘন্টার মত লাগার কথা ট্রেকিং এ।আমরা হাটছি,শুরুতেই ধাক্কা চৈত্র এর কড়া রোদ সাথে গাছাপালা মনে হয় মাটির নিচে চলে গেছে।আর ক’বছর পর পাহাড় গুলো মরুভূমি হয়ে যাবে।

ঠিক ২-২.৩০ ঘন্টা হাটার পর পেলাম বোর্ডিং পাড়া,মোটামুটি এই পাড়ায় ট্যুরিস্ট থাকে কম।কিছুক্ষন ঘুড়ে বেড়িয়ে পরলাম,গন্তব্য শেরকর পাড়া।ট্রেকিং শুরু,এবার লম্বা ট্রেইল নেমে আবার উঠা শুরু,উঠছিই আর উঠছি। সন্ধ্যে হয়ে গেলো এই ১৫৫০+ ফিট ছোট পাহাড় এর চুড়ায় আসতে।বাকি মেম্বার দের জন্যে অপেক্ষায় থাকলাম,তারা

আসলে আমরা নামবো।সামনে আমি,সিয়াম,লাবু ভাই আর সুকান্ত।হঠাত উড়ে এসে আশিক ভাইয়ের আগমন,পেছনে দুটো গ্রুপ আছে যাদের গন্তব্য শেরকর পাড়া,তাই আমরা ডিশিসন নিলাম বাকি মেম্বার রা আসতে থাকুক,আমরা গিয়ে লাল সিয়াম দাদার ঘড়ে আশ্রয় নিয়ে রাখি।নয়তো রুম পেতে কষ্ট।যাক এবার নামলাম মনে হয় দেশের সবথেকে উচু কাঠের সিড়ি,নেমে এলোমেলো হাটতেছি,৩০-৪৫ মিনিট হাটার পর আবার অপেক্ষা শুরু একটা জুমঘড়ে,যদি বাকি মেম্বার রা আসে।এভাবে রেস্ট নিয়ে আবার পথ চলা,দূড়ে দেখা মিললো পাহাড়ে আগুন জ্বলছে,এই আগুন জীব বৈচিত্র্য এর জন্যে হুমকিস্বরুপ,কিন্তু জুমের জন্যে এটা বাধ্যতামূলক।

ঠিক সন্ধ্যে ৮ টার দিকে বা তার একটু পরে আমরা পৌছালাম

শেরকর পাড়া।

গিয়ে ল্যাটানো শুরু,লাল সিয়াম দাদা আমাদের জন্যে পাহাড়ী কলা,বিস্কুট আর আদা চা এনে দিলেন।পানি খাইলাম,তারপর বিশ্রাম নিয়ে আমি বেড়োলাম,পাড়া ঘুড়ে,হাত মুখ ধুয়ে সামনে তক্তার তৈরী বেঞ্চি তে ঘোড় এর মধ্যে ছিলাম।পূর্নিমার রাত,সাথে আর্টসেল আর চারপাশে গেকো,শুকর,ছাগল আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি,পোকা-মাকড় এবং সরীসৃপের ডাক মনে করাতে চাচ্ছে আগামীকাল অনেক কঠিন ট্রেইল।

আমি গাইতে থাকলাম আর্টসেলের-

আমি কার আশাতে,ছুটে চলি পথে পথে-

যেনো কার মায়াতে,বাধা পড়েছে জীবন যে!

Day2

খুব ভোড়ে ঘুম ভাংলো মুরগীর ডাকে,রোদ ফুটে গেছে পাড়ায়।আমি আব্র খুব জলদি ঘুমিয়ে পরতে পারি,আর যে ক্লান্তি ছিলো রাতে,ঘুমোতে বেগ পেতে হয়নি।অহ আমার কথা বলাই হয়নি,আমার নাম মুগ্ধ।ভালো নাম ফাহিম শাহরিয়ার মুগ্ধ।ট্রেকিং দুনিয়াতে আমি বিগিনার ই বলা চলে,মাত্র কিছু সুউচ্চ বা মাঝারি পাহার সামিট করেছি,একবার শিবুচি অং নামের এক লোকাল গাইডের সাথে আমিয়াখুম গিয়েছিলাম,সে আমাকে বলেছিলো ভাই আপনার নাম আমি অংগিয়া বলবো।যাক সেই থেকে অংগিয়া আমার নিক নেইম।যাক অনেক নিজের কথা বললাম,এখন এডভ্যাঞ্চারে ফিরি চলুন।

সকালের নাস্তা সেড়ে রওনা হলাম তাজিংডং এর উদ্দ্যেশ্যে, অফিশিয়ালি দেশের সর্বোচ্চ চুড়া তাজিংডং হলেও আনফিশিয়ালি টপ ২০ টার ভেতরেও এর অবস্থান নেই।যাক সামিট করতে ১.৩০ ঘন্টা লাগলো।এমন সময় পরিচয় একজন বড় ভাইয়ের সাথে যার নাম নাহিদ।তিনি অন্য একটি গ্রুপের সাথে এসেছেন,কিন্তু তার গ্রুপের বাকি মেম্বার রা আর চূড়োর অর্ধেকেও আসতে পারেন নাই।তিনি এসেছিলেন তাজিংডং এই ভেবে যে এটি সর্বোচ্চ চুড়া দেশের,তবে তিনি যখন জানতে পারলেন সাকা-হাফং দেশের সর্বোচ্চ চুড়া তিনিও আমাদের সাথে জয়েন করলেন।আমাদের গ্রুপের এক মেম্বার কিছুটা ভয় পেয়ে সড়ে দাড়িয়েছিলেন।যেহেতু আমাদের বাকি পথ টুকু সম্পুর্ন অফ ট্রেইল,এখানে আছে বিজিবি,আরাকান,পাড়া বাসী এবং জীব জন্তুর ভয়।সাথে পথ হারাবার ভয় তো আছেই।যাক এবার পথ চলা শুরু,দীর্ঘক্ষন হেটে আমরা নতুন সিমলাম্পি পাড়ার কাছে পৌছাই,এই পাড়ার কাছেই বিজিবি ক্যাম্প আছে তাই আর ঢুকলাম না।ক্রস করে এক সরু ট্রেইল বেয়ে পৌছে গেলাম পুরাতন সিমলাম্পি পাড়া।এখানে আর কেউ থাকেনা,আছে একটি পুরাতন বাড়ি,কিছু কবর।বিশ্রাম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু,বেলা তখন ১২ টা।এবার একটি লম্বা হাইওয়ে পেলাম,পার হয়ে বিশাল এক

লম্বা ট্রেইল বেয়ে শুধু নামলাম,অদূরে এক পরিচিত পাড়া।যাবার ইচ্ছা ছিলোনা কিন্তু পানি শেষ।গিয়ে অফুরন্ত পানি খেলাম,এই

পাড়ার কারবারি আমাদের পরিচিত।কিন্তু উনি জুমের কাজে বাহিড়ে গেছেন।কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে বেড় হয়ে পরলাম হাইওয়ে ধরে।কিন্তু একি,সামনে গোলাগুলির শব্দ।আমাদের টিম লিডার শব্দ পেয়ে আমাকে জানালেন,আমিও শুনলাম।শট শট করে শব্দ হচ্ছে।আমরা একটু ভীত হলাম।তবে এইদিকে তো আরাকান থাকেনা।পড়ে বুঝতে পারলাম এটা জুমের ক্ষেতে আগুন লাগানো

হয়েছে,আর সেই আগুনে গাছ কাঠ পুড়ে শব্দ হচ্ছে।যাক নিস্তার পেলাম।আরো সামনে হেটে বুঝতে পারলাম আমরা বিপদে আছি।রাস্তা ভূল করে ফেলেছি।আর কি,আবারো ফিরে গেলাম পাড়ায়।

পানি খেয়ে তাদের কাছে অন্য রূটের রাস্তা জানতে চাইলাম।কারন আমরা যেখানে যাচ্ছি,এটা জানলে মারাত্ত্বক সম্ভাবনা আছে আরাকান দের কাছে খবর যাবার।অতপর একজন কে নিয়ে আমারা বেড় হলাম সেই পাড়ার,সে আমাদের একটা পথ দেখিয়ে দিলো,আমরা ৩ বার ঘুড়েছি কিন্তু পথ টা চোখে পরেনি।পাহাড়ে হরহামেশাই রাস্তা চেঞ্জ হয়।আর অফ-ট্রেইল হলে তো কথাই নাই।তাকে আমরা বিদায় জানালাম এবং বললাম দয়া করে কাওকে যেনো না বলে,সে ভালোই ছিলো।বরাবর ই এইসব পাড়ার লোকজন আমার খুব পছন্দ,এদের মন টা ভালো।তবে এদের সাথে কোখনো হাসি ঠাট্টা করতে যাবেন না,এরা আমাদের মত ইয়ার্কি বুঝেনা।এরা তুই তুকারি করলেও মাইন্ডে লাগাবেন না।এদের বাংলা স্পেল টাই এমন,যদি তাদের ভাল না বাসতে পারেন তবে পাহাড়ে যাবেন না দয়া করে।অফ ট্রেইলে তো অবশ্যই না।

সারাদিন দীর্ঘ ৮.৩০ ঘন্টা ট্রেকিং এর পর এই জুমঘর খুজে পাই,একদিকে বিজিবি ক্যাম্প এর আলো জ্বলছে,তার অন্য আরেক দিকে আরেকটি বিজিবি ক্যাম্প।ছন্নছাড়ার মত বহু আরাকান বাহিনীর ক্যাম্প ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারপাশে।

নীরব রাত্রী নেমে আসলো পাহাড়ের বুকে,পূর্নিমার চাদের ঝলসানো জোৎস্না।

৩৬০ ডিগ্রী একটা এংগেল পাচ্ছি যার থেকে আমাদের গন্তব্য সাকা-হাফং আরো ৭-৮ ঘন্টার হেটে যাওয়ার দুরত্ব।

ঠিক হলো এই জুমঘড়ে খিচুরি পাক করবো,সাথে খিচুরির চাল আর ডাল আছে,আছে কিছু মসলা।

জুমঘরের সামনে যে অংশ টুকু দেখা যাচ্ছে,চললো সেখানে আড্ডা,আজ রাত ১১-১২ টা পর্যন্ত আমরা রি জুমঘড়েই

কাটাবো,কারন রাতে বাকি পথ পাড়ি দিলে সকালে আরাকান বা বিজিবি মামু দের হাতে ধরা পড়ার চান্স কম।

আমি হাতে সিগারেট নিয়ে দূরের অই স্পষ্ট চাঁদ দেখছিলাম আর প্রিয়জন দের মিস করছিলাম।ব্যাগে মাথা রেখে এমন একটা রাত উপভোগ করার অভিজ্ঞতার চান্স পেলে কোখনো মিস করবেন না।

নিমিষে ৫ টা সিগারেট খতম হয়ে গেলো।আমি আর আশিক ভাই প্রথমে বাশ এর কঞ্চি ছেটে রেডি করলাম জ্বালানীর জন্যে।তারপর আমি আর সুকান্ত দা চলে গেলাম সবুজ পাতা খুজতে,পাতাতেই খেতে হবে আজকের শিন্নি।কিন্তু সামনে একটা সরু গোপন সুরংগ পথ ন্যায় দেখে আমার মাথা হলো খারাপ,ভয় তো একটা আছেই আরাকান নিয়ে আমার।।যদি স্বপ্ন ভেংগে যায়।যাক যত কিছুই হোক,স্বপ্নচূড়ায় আমার যেতে হবেই।কিন্তু পাতা পেলাম না,পাহাড়ে একদম শুকনো মৌসুম,বর্ষা এখনো আসে নাই।একটা পাতাও নেই,পাহাড়ে যে হাড়ে গাছ কাটা হচ্ছে তাতে বাতাস যে আছে এটাই সৌভাগ্য। ফিরে এলাম,পাতা নেই৷ পলিথিন এই খেতে হবে।কি আর করার।

আমি মিস করি এই রাত টা,এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত গুলোর একটা।আমি ফিরে গিয়েছি সেইদিন রূপকথায়,সামনে হয়তো এই ট্রেইল টা সহজ হবে যে হারে ট্যুরিস্ট ঢুকা শুরু করছে,তবে যে রুপ তোমার দেখেছি তা আমি কোনোদিনো ভূলবোনা।

 প্রথম ভাগ(সমাপ্তি)

Submitted By: Fahim Sahriar Mugdha